স্বদেশ ডেস্ক: সারা বিশ্বে নাড়া দেয়া জঙ্গি হামলায় রাজধানীর গুলশানের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারির ভবন যেন নীরবে দাঁড়িয়ে আছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয় এ রেস্তোরাঁয়। এতে ঢোকার গেটটি সার্বক্ষণিক রাখা হচ্ছে বন্ধ। তবে ভবনের পার্শ্ববর্তী লেকভিউ ক্লিনিক চালু থাকায় মূল গেট রাখতে হচ্ছে খোলা। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই ভেতরে প্রবেশের অনুমতি মিলছে। এদিকে নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর কার্যক্রম নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছে। গুলশানের র্যাংগস আর্কেডের দ্বিতীয় তলায় চালানো হচ্ছে ব্যবসা। অন্যদিকে জঙ্গি হামলার ৩ বছর পরও ভয় কাটছে না আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের। হামলার ঘটনা মনে করলেই তারা আঁতকে উঠছেন।
এদিকে জঙ্গি হামলার তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে গুলশানে কঠোর নিরাপত্তারবলয় গড়ে তোলা হয়। বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে। গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়িতে হলি আর্টিজান বেকারি। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক আলী আর্সেনাল। এত বড় একটি ঘটনার পর তিনি পড়ে যান বেকায়দায়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ভবনটি। তদন্ত করতে পুলিশ একাধিকবার তলব করেন আলী আর্সেনালকে। তা ছাড়া রেস্তোরাঁর কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পাশাপাশি ভবন মালিককেও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আলী আর্সেনালকে ব্যবসা করার অনুমতি দেয় পুলিশ। তবে ওই ভবনে আর ব্যবসা করতে পারেননি তিনি। আরও জানান, ‘এত বড় একটি ঘটনার পর দেশবাসীর পাশাপাশি আমিও মুষড়ে পড়েছিলাম। কী করব ভেবে উঠতে পারছিলাম না। প্রতিষ্ঠানটি বিদেশিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। ২৪ ঘণ্টাই মুখরিত ছিল রেস্টুরেন্টটি। জঙ্গি হামলার পর একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দেশের বাইরে চলে যাব। কিন্তু বিবেক বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সিদ্ধান্ত নিলাম, যা করব দেশেই করব। নতুন উদ্যমে ব্যবসা শুরু করতে প্রশাসন বেশ সহায়তা করেছে।’ তিনি আরও জানান, ‘গুলশান-১ নম্বরের অ্যাভিনিউর র্যাংগস আর্কেডের দ্বিতীয় তলায় চালু করা হয় বেকারিটি। এখন স্বাভাবিকভাবে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রথম অবস্থা ক্রেতা কম ছিল। এখন ক্রেতা বেড়েছে অনেক। আরেকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায় কি না, তা ভাবছি।’ নতুন করে চালু হওয়া রেস্তোরাঁয় দেখা যায়, ক্রেতা ভরপুর। সাত-আটজন কর্মচারী প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। রাকিবুল ইসলাম নামে এক কর্মচারী জানান, ‘হামলার পর অনেকেই চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। তবে পুরনো কর্মচারীদের কাছ থেকে হামলার কাহিনি জেনেছি।’ তিনি জানান, রেস্তোরাঁয় ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি। বেচাকেনা ভালো। মালিকের আরেকটি প্রতিষ্ঠান খোলার কথা রয়েছে। নিরাপত্তাও ভালো। পুলিশি টহল থাকে সব সময়।
হলি আর্টিজান ভবনে দেখা যায়, প্রবেশের মাথায় ডাইভারশন করে রেখেছে পুলিশ। বাড়িটি তালাবদ্ধ রয়েছে। একই গেট দিয়ে ঢুকে দক্ষিণ পাশে দেখা যায় লেকভিউ ক্লিনিক। বাড়িটির নিরাপত্তাকর্মী নূরুজ্জামান জানান, জঙ্গি হামলার পর বাড়ি থেকে বেকারি সরিয়ে নিয়ে বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। বেশির ভাগ সময় বাড়িটি সুনসান অবস্থায় থাকে। রাত হলে তাদেরই ভয় লাগে। বাড়ির চারপাশে আলো জ্বালানো হয় বেশি। বাড়িটি সুন্দরভাবে মেরামত করেছেন মালিক। ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। তিনি আরও জানান, গণমাধ্যমকর্মী হলে ঢুকতে আরও বেগ পেতে হয়। শুধু লেকভিউ ক্লিনিকে আসা রোগী, দর্শনার্থী ও বাড়ির মালিকের স্বজনদের যেতে দেওয়া হয়। ভবনের মূল গেট খোলা থাকে। তবে যে ভবনটিতে হামলা হয়েছে, সেখানকার গেটটি সারাক্ষণ বন্ধ রাখতে হয়।
গেটের পাশে লম্বা দেয়াল আর টিন দিয়ে ঘেরা। এতে বেকারিটির সামনে থেকে শুধু দোতলা পর্যন্ত দেখা যায়। পুলিশের কাছ থেকে বুঝে পাওয়ার পর বাড়ির মালিক সামিরা আহমেদ, তার স্বামী সাদাত মেহেদী ও এক সন্তান এখানে বসবাস করছেন। তবে বেশির ভাগ সময়ই তারা দেশের বাইরে থাকেন।